ICSE 2019 - ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, মন্ট্রিয়েল, ক্যানাডা

ICSE 2019  - ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, মন্ট্রিয়েল, ক্যানাডা
জুন ৩, সোমবার, ২০১৯।


এ বছর ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (International Conference on Software Engineering সংক্ষেপে ICSE  - উচ্চারণ 'ইকসি ') -র ৪১তম আসর অনুষ্ঠিত হলো ক্যানাডার মন্ট্রিয়াল শহরে। শিক্ষক হিসাবে এই প্রথম গেলাম। আগে পিএইচডি ছাত্র হিসাবে প্রফেসরের সাথে একটা ছোট পেপার আর পোস্টার প্রেসেন্ট করতে ২০১০ -এ গিয়েছিলাম সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউন শহরে। এইবার শুধু এটেন্ড করতে গিয়েছি, কোনো পেপার বা পোস্টার প্রেসেন্ট করতে না। সাথে প্রফেসরও নাই, সেইজন্যই বোধহয় খুব হালকা মেজাজে ছিলাম। খুব ভালো লেগেছে। নতুন অনেক কিছু শিখলাম, নেটওয়ার্কিং হলো - আর এইসব কিছু ব্যাপার শেয়ার করার জন্যই লিখছি।


১. বাংলাদেশের কোনো বিশবিদ্যালয় থেকে ICSE র মতো টপ কনফারেন্সে যে কেউ পেপার পাবলিশ করে, আমি আগে চিন্তাও করি নাই। অবাক হয়ে জানলাম, গত বছর অর্থাৎ ICSE ২০১৮-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লয়ের আই আই টি (IIT) থেকে একটা পেপার একসেপ্ট হয়েছে!!  অমিত ও তাঁর দলের সেই পেপার পাওয়া যাবে এই লিংকে। আমার আরো অবাক হওয়া বাকি ছিলো। পরে জানলাম, এবছরও আই আই টির আরেকজন শিক্ষক সাঈদের একটা পেপার একসেপ্ট হয়েছিল, কিন্তু ভিসার জটিলতায় উনি ক্যানাডায় এসে আর প্রেজেন্ট করতে পারেন নাই।

২. বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্বের অন্য অনেক দেশেই পিএইচডি করছে - এটা নতুন কিছু না। কিন্তু আবারো অবাক হওয়ার পালা। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং -এ যে এতজন কাজ করে, আমার কোন  ধারণা ছিল না। শুধু তাই না, অনেকে আবার ফ্যাকাল্টি হিসাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজও করছেন। তাঁদের পিএইচডি স্টুডেন্টও আছে। সবার সাথে এই কনফারেন্সে গিয়ে দেখা - পরিচিত হওয়া গেলো। নিচে একটা ছবি দিলাম।

ICSE ২০১৯ কনফারেন্সে বাংলাদেশি গবেষকদের এক অংশ
৩.  IEEE/ACM SIGSOFT Distinguished Paper Award  - সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং -এর উপর গবেষণার একটা বিরাট স্বীকৃতি পুরস্কার। প্রথমে বলে নেই SIGSOFT মানে হচ্ছে Special Interest Group on Software Engineering. ICSE ২০১৯-এ কে পেয়েছে এটা ভাবুন তো? বুয়েট থেকে পাশ করা, এখন নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট উনিভার্সিটিতে পিএইচডি করেছে বাংলাদেশের আকন্দ রহমান!! সে, তাঁর প্রফেসর আর আরেকজনের সাথে লেখা পেপারের জন্য এ বছরের পুরস্কার পেয়েছে। কিন্তু বেচারা ভিসা সমস্যার কারণে নিজে উপস্থিত থেকে পুরস্কারটা নিতে পারে নাই (আমাদের এই ভিসা সমস্যার থেকে যে কবে মুক্তি হবে?!)
আকন্দ রহমান ও তার দলের অ্যাওয়ার্ড 


৪. এইসব কনফারেন্সে একটা মূল টেকনিক্যাল ট্র্যাক থাকে। কিন্তু পাশাপাশি আরো অনেক ট্র্যাক থাকে যেইগুলোতেও পাবলিশ করাও সমান ভাবে কঠিন আর সম্মানের। যেমন, Software Engineering Education and Trainging (SEET) - এই ট্রাকের মূল আইডিয়াই হচ্ছে কিভাবে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় উন্নতি করা যায়।  ক্লাসে পাঠদান, প্রজেক্ট বেসড কোর্সগুলোতে শিক্ষকরা নতুন কী কী পদ্ধতি ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছেন,  ইন্ডাস্ট্রির সাথে কোলাবোরেশন করে পাওয়া কোনো আইডিয়া - এইসব গবেষণা করা আর তার ফল প্রকাশ করার জন্যই এই ট্র্যাক। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষক এ ব্যাপারে তাঁর কোনো কাজ থাকলে পেপার সাবমিট করে দেখতে পারেন।

৫. একই ভাবে, মূল কনফারেন্সের আগের দুইদিন কে-লোকেটেড অনেক ছোট ছোট ওয়ার্কশপ থাকে। যেমন, সফটওয়্যার টেস্ট অটোমেশন, মোবাইল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, "জেন্ডার ইকুয়ালিটি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং" ইত্যাদি। এইসব ওয়ার্কশপে পেপার পাবলিশ করা কিছুটা সহজ হলেও ইমপ্যাক্ট কিন্তু প্রায় একই।  প্রচুর লোকজন এইসব ওয়ার্কশপে নিজের কাজ আর আইডিয়া শেয়ার করার জন্য যায়। আপনার কাজ মানুষকে জানানোর জন্য এই ওয়ার্কশপগুলো খুবই কাজের। এই লিংকে আপনি ওয়ার্কশপ আর ট্র্যাক গুলার লিংক পাবেন।

৬. বড় বড় কোম্পানি গুলো এইসব কনফারেন্সে এসে তাদের লেটেস্ট প্রোডাক্টের উপর টিউটোরিয়াল সেশন আয়োজন করে। যেমন এবছর Google তাদের TensorFlow 2.0-alpha -র উপর একটা ইন্টারেক্টিভ টিউটোরিয়াল করলো।  পুরোটাই আবার করলো ওয়েববেসড IDE colab ব্যবহার করে। ওয়েববেসড এরকম যে একটা IDE আছে আর TensorFlow তে যে মেশিন লার্নিং-এর উপর এতো কাজ করা যায় - এই প্রথম জানলাম। TensorFlow Playground - র সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলো।  তাছাড়াও, অন্য কোম্পানিরা চাকরি দেয়ার জন্য পিএইচডি শেষ করে ফেলবে এমন ছাত্র-ছাত্রী খোঁজ করতে আসে। Facebook এসেছিলো। ওরা আবার তাদের টেস্টিং-র প্রবলেম সল্ভ করার জন্য গবেষকদের কাছ থেকে প্রপোসাল চেয়ে বিরাট অংকের পুরস্কার ঘোষণা করে বসলো! কেউ ইন্টারেস্টেড হলে বিস্তারিত এই লিংকে পাওয়া যাবে।

৭. নিউ ফ্যাকাল্টি সিম্পোসিয়াম নামের একটা ওয়ার্কশপ হলো।  সেখানে সব ঝানু ঝানু, টেনুর্ড (মানে পার্মানেন্ট আর কি) বক্তৃতা দিলেন। যারা জানে না তাদের জন্য বলি, নর্থ আমেরিকাতে টেনুয়র্ড হওয়ার আগে কোনো প্রফেসর-এর চাকরিই আসলে নিশ্চিত না। চাকরিতে যোগ দেয়ার ৫-৬ বছর পর রিসার্চ পাব্লিকেশন,  পড়ানোর কোয়ালিটি আর রিসার্চ ফান্ড কে কেমন আনতে পেরেছেন - তার উপর ভিত্তি করে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর টেনুয়র্ড হয়ে পার্মানেন্ট হোন, প্রমোশন পেয়ে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হোন। তা না পারলে টিচিং বা রিসার্চ  অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে বাকি সময় থাকতে হবে। টেনুয়র্ড না হলে  অনেকেই তখন চাকরি বদলিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেন। খুব ভালো একটা ফিল্টারিং প্রসেস! যাই হোক, এই প্রফেসররা নতুন শিক্ষকদের কিভাবে গবেষণা করতে হবে, কিভাবে পেপার পাবলিশ করতে হবে, কাজ আর জীবনের (ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্স) সমন্বয় কিভাবে করতে হবে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত, খুবই কাজের সব উপদেশ, দিক-নির্দেশনা দিলেন। বাংলাদেশে যেহেতু এইসবের বালাই নাই, তাই আর এ ব্যাপারে লিখছি না। কেউ জানতে চাইলে মেসেজ দিলে আমি পার্সোনালি শেয়ার করবো।

৮.  এইসব কনফারেন্সে আপনার সাবমিট করা পেপার কমপক্ষে ২-৩ জন রিভিউ করেন। আপনার গবেষণা, এর নতুনত্ব, গবেষণার পদ্ধতি, ফলাফল, ফলাফল পুনরায় বের করা যাবে কিনা, আপনার পেপারের লেখার ধরণ ইত্যাদি বিষয় গুলো বিবেচনা করে রিভিউয়ার যদি সবাই একমত হয়, তবেই কেবল আপনার পেপার পাবলিশ করার জন্য সিলেক্টটেড হবে। একসেপটান্স রেট খুব কম, সাধারণত ২০-২২% হয়।  অর্থ্যাৎ প্রতি ১০০ টা সাবমিট করা পেপারের ২১-২২ টা পেপার পাবলিশ করার জন্য মনোনীত হয়।একসেপ্ট না হয় পেপারের লেখকরা তখন অন্য কোনো কনফারেন্সে সাবমিট করেন অথবা পরের বছর আবার চেষ্টা করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জাজমেন্ট ফেয়ার হওয়ার জন্য ইদানিং 'ডাবল ব্লাইন্ড ' পদ্ধতিতে পেপার রিভিউ করা হয়।  অর্থাৎ প্রোগ্রাম কমিটি কোনো পেপারের লেখকের নাম মুছে  রিভিউয়ার -র কাছে পাঠাবেন। আবার পেপারের লেখকও জানবেন না কে তার পেপার রিভিউ করছেন।  আগে হতো কি, নাম করা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের পেপার রিভিউয়াররা ভয়েই একসেপ্ট করে ফেলতেন।  আবার পুরোনো শত্রুতা, হিংসা থেকেও পেপার রিজেক্ট করার সম্ভাবনাও থাকতো।  ডাবল ব্লাইন্ড পদ্ধতিতে সবার সমান সুযোগ থাকছে।

৯. এই সব কনফারেন্সে টুইটার (Twitter) যে মানুষজন এতো ব্যবহার করে, কোনো ধারণাই ছিল না।  আমার টুইটার একাউন্ট ছিল না। কনফারেন্সে একই সাথে অনেকগুলো ওয়ার্কশপ, টিউটোরিয়াল আর রিসার্চ ট্র্যাক-এর  প্রেসেন্টেশন চলতে থাকে। কোনটা ছেড়ে কোনটাতে যাই? উপায় কী ? উত্তর: টুইটার। লোকজন একটু পর পরই কোনো ইন্টারেষ্টিং টপিক, প্রেসেন্টেশন পেলেই টুইট করে।  @ICSEconf - এই হ্যান্ডলের টুইটার একাউন্ট ICSE কনফারেন্সের অফিসিয়াল টুইটার একাউন্ট।তাছাড়া  #icse19 হ্যাশ ট্যাগ ব্যবহার করেও লোকজন  অনবরত টুইট করেছে। কাজেই, কনফারেন্সে বসেই আমি টুইটার একাউন্ট ইনস্টল করে ব্যবহার শুরু করলাম। খুবই কাজের একটা মাধ্যম।


আজকে এই পর্যন্তই থাক।  একটা ইউনিক অভিজ্ঞতা হলো।  সবটুকু লিখে আসলে বোঝানো যাবে না।  শেষে মজার একটা তথ্য দিয়ে শেষ করি।  ক্যানাডার মন্ট্রিয়েল শহরের মূল ভাষা কিন্তু ফ্রেঞ্চ! রাস্তার রোড সাইন, দোকানের বিজ্ঞাপন সব কিছু ফরাসি ভাষায় লেখা। আপনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন, ওরা ইংরেজিতে উত্তরও দিতে চেষ্টা করবে, কিন্তু আলাপ জমাতে পারবেন না। আর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট খুবই ভালো।  শহরের সব জায়গায় সহজেই বাস, ট্রামে করে যেতে পারবেন। সবচেয়ে যে জিনিসটা আমার ভালো লেগেছে তা হলো, খুবই কসমোপলিটান একটা শহর।  সব জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষের খুবই চমৎকার একটা সহবস্থান। উত্তর আমেরিকায় এ যেন ছোট্ট একটা ইউরোপ।







No comments:

Post a Comment

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম  ৩ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, ২০২৪ রেগুলার এক্সপ্রেশন (Regular Exp...