আমেরিকায় (বা দেশের বাইরে) পড়তে আসার সময় সাথে যা নিয়ে আসা উচিত।

আমেরিকায় (বা দেশের বাইরে) পড়তে আসার সময় সাথে যা নিয়ে আসা উচিত।
(মার্চ ২৭, ২০১৬, রবিবার)

মার্চ - এপ্রিল এই সময়টা দেশের বাইরে, বিশেষ করে আমেরিকায় পড়তে আসতে চাওয়া অনেকেরই একটা মিশ্র অনুভুতির সময়।  কারো ফান্ডিং সহ এডমিশন হওয়ার খবরে খুশিতে ফেটে পরার অবস্থা, আবার কারো ফান্ড হয়নি কিন্তু এডমিশন হওয়ার খবরে না খুশি, না বেজার অবস্থা। কেউ কেউ হয়তো আবার GRE দিয়ে পরের বার চেষ্টা করার কথা ভেবে মন খারাপ করছে । কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, উপরের সবাই সাহস করে বাইরে পড়তে আসার চেষ্টাটা শুরু করেছে। এবং এক সময় না এক সময় ঠিকই হয়ে যাবে।


আমার সময় শিশির ভাই (৫ ব্যাচ, সিএসই, ডিইউ) আমাকে আগাগোড়া কী করতে হবে বলে দিয়েছিলেন। কিছু কিছু ব্যাপার আবার এইখানে এসে জানলাম, শিখলাম। সেই সব পয়েন্ট গুলো এইখানে লিখে রাখবো বলেই আজকে লিখছি। কাজেই, আজকের পোস্ট কোনভাবেই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং -র সাথে সম্পর্কিত না, স্যরি।

প্রথমেই আমেরিকায় আসার সময় কী কী জিনিস সাথে নিয়ে আসা উচিত তার একটা লিস্ট দিচ্ছি, পরে কোনো এক লেখায় বলবো কী কী জেনে আসা উচিত।
  • ধর্মীয় বই (যেমন, বাংলা তর্জমায় কোরআন, সহীহ হাদিস বই)।জায়নামাজ। বড় শহর না হলে এইগুলো বাংলায় পাওয়াটা বেশ ঝামেলার। 
  • কমপক্ষে ৩,০০০ ডলার। এমন কী ফুল ফান্ডিং থাকলেও। কারণ প্রথম পে-চেক পেতে প্রায়-ই দেরী হয়।  তখন বাসা ভাড়া, খাবার খরচ ইত্যাদির জন্য সাথে আনা ডলারই ভরসা। 
  • ২/১ টা হাড়ি পাতিল, ফ্রাইং প্যান। পরিচিত কেউ না থাকলে বা পরিচিত কারো বাসায় না উঠলে, তা না হলে এসেই এগুলো কিনতে হবে।  
  • বদনা!! হাসির কোনো কারণ নাই। এই জিনিস না আনলে পরে গাছে পানি দেয়ার লম্বা নল ওয়ালা এক ধরনের জগ ব্যবহার করতে হবে - খুবই বিরক্তিকর।    
  • নীলক্ষেত প্রিন্ট টেক্সট বই (এলগরিদম, কম্পাইলার, অটোমাটা) । আমারিকায় লাইব্রেরিতে টেক্সট বইগুলো খুব বেশি কপি থাকে না!! অরিজিনাল কপির দাম স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বেশি। নীলক্ষেত প্রিন্ট বইগুলো আবার ভুলেও ক্লাসে নিয়ে যাবেন না। বাসায় নিজে পড়ার জন্য আনলে ঠিক আছে।  
  • বালিশ, কাঁথা। শিমুল তুলার বালিশের আরাম আমারিকার ফোমের বালিশে কোনদিনও পাওয়া যাবে না।  
  • জরুরি ঔষধ।  বিশেষ করে এন্টি-বায়োটিক। এইগুলোকে প্রেস্ক্রিপশন ড্রাগ বলে। আমরিকাতে এইগুলো ডাক্তার না দেখিয়ে কিনতে পারা যায় না। এখানকার ফার্মেসি কোনদিনও (আমারিকার কোনো ডাক্তারের লেখা) প্রেসক্রিপশন না দেখালে এইগুলো বিক্রি করবে না।  ভয় নাই, প্লেনে এসব ঔষধ আনতে দেয়।  সাবধানতার জন্য আনার সময় দেশী ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সাথে রাখতে পারেন, যাতে কাস্টমসে জিগ্যেস করলে দেখাতে পারেন।  
  • কেডস, দৌড়ানোর ট্রাউসার, ঘুমানোর পায়জামা, গরমে বাইরে পড়ার জন্য সান্ডেল-সু। অনেক জোড়া মোজা।  আর ঠান্ডার জন্য কমপক্ষে দুই জোড়া জ্যাকেট (একটা হালকা শীতে পড়ার জন্য পাতলা, আরকেটা ভারী), হাত-মোজা, কান টুপি, থার্মাল বা ইনার।  
  • ব্যাক-প্যাক। ক্লাসে যাওয়ার সময় ল্যাপটপ, বই-খাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য।
  • সানগ্লাস।  চশমা পড়লে, কমপক্ষে ২ জোড়া। চোখের ডাক্তারের পাওয়ার লেখা প্রেসক্রিপশন। অবশ্যই দুই চোখের মনির দূরত্ব (pd  বা pupil distance) লিখিয়ে আনা উচিত। এইগুলো জানা থাকলে অনলাইন-এ খুব সহজেই, কম খরচে চশমা অর্ডার দেয়া যায় (যেমন: https://www.eyebuydirect.com/)
  • চামড়ার বেল্ট। এই জিনিসের দাম এখানে অনেক বেশি। 
  • সিদ্দিকা কবিরের রান্নার বই।  
  • মশলা - হলুদ, মরিচ সহ অন্য সব গুলোর রাঁধুনি বা প্রাণ-এর প্যাকেট গুড়া মশলা সাথে আনা উচিত। আর আপনি যদি ইন্ডিয়ান/বাংলাদেশী দোকান আছে এমন কোনো শহরে যাচ্ছেন - তাহলে আনার কোনো দরকার নেই, এইগুলো সবই পাওয়া যাবে। 
  • পার্সোনাল আইটেম - সেভিং কিট, বডি স্প্রে, নেইল কাটার ইত্যাদি। টুথব্রাশ, শ্যাম্পু, ছোট একটা সাবান। লম্বা জার্নি শেষে প্লেন থেকে নেমে বাসায় গিয়ে গোসল করার সময় রুমমেটের জিনিস আপনি নিশ্চই ব্যবহার করতে চাইবেন না। 
  • ছোট একটা ছাতা।  বৃষ্টি, ঝড় যাই হোক, খুব খারাপ অবস্থা না হলে কিছুই বন্ধ হবে না। ক্লাস, পরীক্ষা কারো জন্য কিছুই বাদ যাবে না।  তৈরী হয়ে থাকা ভালো। 
  • প্রফেসরের জন্য, ডিপার্টমেন্ট অফিস এডমিন বা এপার্টমেন্ট ম্যানেজার -এর জন্য ছোটখাটো গিফট। কার্জন হলের উল্টো দিকের দোকান গুলোতে এইসব জিনিসের অভাব নাই।ছোটখাটো এইসব গিফট দিলে তাঁরা খুবই খুশি হয়। 
  •  গাড়ি চালানো শিখে আসা উচিত। এই জ্ঞানটা যে কত জরুরী, এইটা ছোট শহরে আসা যেকোনো বড়ভাই/বোন্ কে জিগ্যেস করে দেখতে পারেন। আপনি এক সময় না এক সময় গাড়ি কিনবেনই, তা না কেনা পর্যন্ত অনেকটা পঙ্গু হয়েই থাকতে হয়।  বাজারে যাওয়া সহ যেকোনো কাজে অন্য কারো কাছে রাইড/লিফট চাওয়া টা মাঝেমাঝে খুবই বিব্রতকর। আর অন্য কারো গাড়ি দিয়ে, গাড়ি চালানো শিখতে চাওয়াটা তো আরো বেশি। 
  • তন্ময় (আমিন আহসান আলী) স্যার -র কমেন্ট এইখানে দিয়ে দিচ্ছি: "ভালো লিখেছ ইশতিয়াক । বিদেশে বদনা আর বালিশ- এই দুই "ব" না থাকাটা বড়ই বেদনার । একটু রান্না-বান্না ( মুরগী আর ডাল) জানাটাও জরুরী। তবে প্রথম ছ'মাস/বছর ম্যাকডোনাল্ড আর চাইনিজ খাবার খেয়ে কাটিয়ে দিতে দেখেছি আনেককেই।"
  • রাশিদা হাসান রুপার কমেন্ট থেকে নিচ্ছি: দেশীয় কাপড় যেমন, পায়জামা-পাঞ্জাবি, শাড়ি,-সালোয়ার-কামিজ নিয়ে আসা উচিত। ঈদ-পূজা-অনুষ্ঠানে এইগুলো কাজে লাগে।  

মোটামুটি এইসব সাথে আনলেই প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নেয়া যায়।  আমার মতে কাপড়-চোপড় খুব বেশি আনাটা বোকামি। এখানেই সস্তায় সব কাপড় পাওয়া যায়।  অল্প অল্প করে কিনতে পারেন। দেশ থেকে আনা আমার সব কাপড়ই লন্ড্রিতে ধোয়ার  কয়েকদিন পরেই, লোম উঠে, না হয় ছোট হয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। 

আজকে এই পর্যন্তই। পরের লেখায় ইচ্ছে আছে লিখবো কী কী জেনে আসা উচিত। অনেক জিনিস আছে যেগুলো কেউ আসলে শিখিয়ে দেয় না, হয় ঠেঁকে আর নাহয় কমন সেন্স থেকে শিখতে হয়। 

ধন্যবাদ। 
--ইশতিয়াক


No comments:

Post a Comment

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম  ৩ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, ২০২৪ রেগুলার এক্সপ্রেশন (Regular Exp...