আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ফ্যাকাল্টি বা শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি
৩০ এপ্রিল, ২০২০, বৃহস্পতিবার
রোজা মাস, করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি। ঘুমানো দরকার। কিন্তু তাও কিছু একটা লিখতে ইচ্ছা করছে, তাই ভাবলাম, এই বিষয়টা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু লিখি। লেখাটা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাথে কোনোভাবেই যায় না, তাও লিখছি।
শুরুতেই বলে নেই, আমেরিকার শিক্ষক নিয়োগ মূলত দুই ট্রাকে হয় - টেনিয়র ট্র্যাক (Tenure) আর নন-টেনিয়র ট্র্যাক (Non-tenure)। টেনিয়র ট্র্যাকের ফ্যাকাল্টি বা শিক্ষকরা মূলত গবেষণা -নির্ভর কাজ করেন, পাশাপাশি পড়ান, ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন সার্ভিস দেন। ৫-৬ বছর এভাবে চলার পর, যদি এই সময়ে ভালো বেশ কিছু সংখ্যক পেপার পাব্লিশ করতে পারেন, ক্ষেত্র বিশেষে গবেষণা ফান্ড আনতে পারেন, মোটামুটি ভালো পড়াতে পারেন - তাহলে শেষমেষ তাঁদের চাকরি স্থায়ী বা পার্মানেন্ট হয়। আর একবার পার্মানেন্ট হলেই হলো, তাঁদের আর নির্দিষ্ট কোনো রিটায়ারমেন্ট বয়স থাকে না!
অন্য দিকে, নন-টেনিয়র ট্র্যাকের ফাকাল্টিদের চাকরি অনেকটা কন্ট্রাক্ট বেসিসে হয়। মোটামুটি ভালো পড়াতে পারলেই হলো, বছর বছর কন্ট্রাক্ট রিনিউ হয় আর তাঁরাও পড়াতে থাকেন। গবেষণা, পেপার পাবলিশ কিংবা বাইরে থেকে রিসার্চ ফান্ড আনার কোনো প্রেসার থাকে না।
যাই হোক, আজকে লেখায় টেনিয়র ট্র্যাকের ফ্যাকাল্টি নিয়োগ নিয়ে কিছু লিখবো। কিন্তু আমার ধারণা, নন-টেনিয়র ট্র্যাকের হাইয়ারিং মোটামুটি একই রকম হয়।
মূলত ৩ ধাপে শিক্ষক বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হয়। আর প্রতিটা ধাপে যা করা উচিত, আর যা করা উচিত না, সেটাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি।
ধাপ ১: রেসুমে ও অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেয়া :
শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইউনিভার্সিটি গুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট ছাড়াও অন্যান্য জব সাইটে দেয়া হয়। আমি নিজে https://www.higheredjobs.com/ এই ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞাপন দেখে এপলাই করেছিলাম। এছাড়াও শুনেছি https://chroniclevitae.com/ বেশ ভালো ওয়েবসাইট। আরো অনেক ওয়েবসাইট নিশ্চই আছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সিনিয়র, নাসিম ভাই একটা ওয়েবসাইটের নাম কমেন্টে খেয়াল করিয়ে দিলেন: www.cra.org - এটা মূলতঃ আমেরিকা আর ক্যানাডাতে কম্পিউটার সায়েন্সের উপর ফ্যাকাল্টি, পোস্টডক ইত্যাদি পজিশনের এডভার্টাইসমেন্ট দিয়ে থাকে। যাই হোক, সাধারণত: জব গুলোর জন্য, একাডেমিক রেসুমে, একটা কভার লেটার, রিসার্চ আর টিচিং ফিলোসফি, ৩ জন রিকোমেন্ডর-র নাম জমা দিতে হয়।
যা করা উচিত:
ধাপ ২: প্রথম স্কাইপ কিংবা জুম ইন্টারভিউ কল:
আপনার রেসুমে সহ অন্যান্য কাগজপত্র সার্চ কমিটির পছন্দ হলে, সেই কমিটির চেয়ার আপনাকে পরের ধাপ, অর্থাৎ স্কাইপ কিংবা জুম ভিডিও ইন্টারভিউয়ের জন্য ইমেইল পাঠাবেন। তারিখ আর সময় ঠিক করবেন। তারপর তৈরী হবেন।
যা করা উচিত:
ধাপ ৩: অন-সাইট ইন্টারভিউ, ক্যাম্পাস ভিসিট :
আপনার স্কাইপ বা জুম ইন্টারভিউ ভালো হলে, আপনি শর্ট লিস্টেড হলে ধাপ ৩ -এর জন্য ডাক পাবেন। ধাপ ৩ এ মূলত আপনি ওদের ক্যাম্পাসে মোটামুটি ৫-৬ ঘন্টার জন্য যাবেন। এই ধাপে সাধারণত আপনাকে একটা টিচিং আর আরেকটা রিসার্চ লেকচার দিতে হবে। লেকচারের বিষয় সচরাচর আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে, যাতে তুলনা করতে সুবিধা হয়, সার্চ কমিটি আপনাকে একটা বিশেষ বিষয়ের উপর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে একটা ৩০-৪০ মিনিটের টিচিং লেকচার দিতে বলতে পারে। তবে, রিসার্চ লেকচার আপনি আপনার কাজের উপর দিতে পারবেন।
এই লেকচার দেয়ার পর, আপনাকে ফ্যাকাল্টি ডিন আর ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলরের সাথে মিটিং করতে হবে। সম্ভাবনা আছে, এর আগে বা পরে আপনাকে নিয়ে লাঞ্চ করবে। এই মিটিং গুলোতে 'খাজুরে" আলাপই বেশি হয়। ডিন আর চ্যান্সেলর উনাদের ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলাপ করেন, আপনার সম্পর্কে আবারো জানতে চাবেন, আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে উত্তর দিবেন।
যা করা উচিত:
শেষ ধাপ, চাকরির অফার:
অভিনন্দন, আপনি চাকরির অফার পেয়েছেন। এইবার আপনার স্যালারি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলাপ হবে। সার্চ কমিটির চেয়ার, ইউনিভার্সিটির ডিন কিংবা চ্যান্সেলর আপনার সাথে আলাপ করতে পারেন। এই ধাপে এসে আপনার চাকরি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এই ধাপে ঠিকমতো কথা বা নিগোশিয়েট না করলে আপনি অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হতে পারেন।
যা করা উচিত:
৩০ এপ্রিল, ২০২০, বৃহস্পতিবার
রোজা মাস, করোনা ভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি। ঘুমানো দরকার। কিন্তু তাও কিছু একটা লিখতে ইচ্ছা করছে, তাই ভাবলাম, এই বিষয়টা নিয়ে সংক্ষেপে কিছু লিখি। লেখাটা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাথে কোনোভাবেই যায় না, তাও লিখছি।
শুরুতেই বলে নেই, আমেরিকার শিক্ষক নিয়োগ মূলত দুই ট্রাকে হয় - টেনিয়র ট্র্যাক (Tenure) আর নন-টেনিয়র ট্র্যাক (Non-tenure)। টেনিয়র ট্র্যাকের ফ্যাকাল্টি বা শিক্ষকরা মূলত গবেষণা -নির্ভর কাজ করেন, পাশাপাশি পড়ান, ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন সার্ভিস দেন। ৫-৬ বছর এভাবে চলার পর, যদি এই সময়ে ভালো বেশ কিছু সংখ্যক পেপার পাব্লিশ করতে পারেন, ক্ষেত্র বিশেষে গবেষণা ফান্ড আনতে পারেন, মোটামুটি ভালো পড়াতে পারেন - তাহলে শেষমেষ তাঁদের চাকরি স্থায়ী বা পার্মানেন্ট হয়। আর একবার পার্মানেন্ট হলেই হলো, তাঁদের আর নির্দিষ্ট কোনো রিটায়ারমেন্ট বয়স থাকে না!
অন্য দিকে, নন-টেনিয়র ট্র্যাকের ফাকাল্টিদের চাকরি অনেকটা কন্ট্রাক্ট বেসিসে হয়। মোটামুটি ভালো পড়াতে পারলেই হলো, বছর বছর কন্ট্রাক্ট রিনিউ হয় আর তাঁরাও পড়াতে থাকেন। গবেষণা, পেপার পাবলিশ কিংবা বাইরে থেকে রিসার্চ ফান্ড আনার কোনো প্রেসার থাকে না।
যাই হোক, আজকে লেখায় টেনিয়র ট্র্যাকের ফ্যাকাল্টি নিয়োগ নিয়ে কিছু লিখবো। কিন্তু আমার ধারণা, নন-টেনিয়র ট্র্যাকের হাইয়ারিং মোটামুটি একই রকম হয়।
মূলত ৩ ধাপে শিক্ষক বাছাই করে নিয়োগ দেয়া হয়। আর প্রতিটা ধাপে যা করা উচিত, আর যা করা উচিত না, সেটাই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি।
ধাপ ১: রেসুমে ও অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেয়া :
শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইউনিভার্সিটি গুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট ছাড়াও অন্যান্য জব সাইটে দেয়া হয়। আমি নিজে https://www.higheredjobs.com/ এই ওয়েবসাইট থেকে বিজ্ঞাপন দেখে এপলাই করেছিলাম। এছাড়াও শুনেছি https://chroniclevitae.com/ বেশ ভালো ওয়েবসাইট। আরো অনেক ওয়েবসাইট নিশ্চই আছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সিনিয়র, নাসিম ভাই একটা ওয়েবসাইটের নাম কমেন্টে খেয়াল করিয়ে দিলেন: www.cra.org - এটা মূলতঃ আমেরিকা আর ক্যানাডাতে কম্পিউটার সায়েন্সের উপর ফ্যাকাল্টি, পোস্টডক ইত্যাদি পজিশনের এডভার্টাইসমেন্ট দিয়ে থাকে। যাই হোক, সাধারণত: জব গুলোর জন্য, একাডেমিক রেসুমে, একটা কভার লেটার, রিসার্চ আর টিচিং ফিলোসফি, ৩ জন রিকোমেন্ডর-র নাম জমা দিতে হয়।
যা করা উচিত:
- যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত, কিন্তু গোছানো রেসুমে হতে হবে। আগে কোনো টিচিং অভিজ্ঞতা থাকলে, সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে হবে। কি কি কোর্স, কতজন ছাত্র-ছাত্রী ছিল, পারলে সিলেবাস'র স্যাম্পল ইত্যাদি দিতে পারেন। আমার রেসুমে খুবই সাধারণ, তাও স্যাম্পল হিসাবে শেয়ার করলাম। যদি কারো কাজে লাগে, ক্ষতি নাই।
- কভার লেটারে আপনি কেন এই পোস্টে এপ্লাই করেছেন, কেন আপনি একজন যোগ্য প্রার্থী, আপনি কী বা দিতে পারবেন, সংক্ষেপে লিখে দিবেন। অবশ্যই সেটা বিজ্ঞাপনের ভাষার সাথে মিল রেখে হতে হবে।
- আপনার রিসার্চ এবং টিচিং ফিলোসফি অবশ্যই কোনো বন্ধু বা সিনিয়র - যে কিনা অলরেডি এই পেশায় আছে এবং আরো ভালো হয় যদি তিনি নিজে ফ্যাকাল্টি সার্চ কমিটিতে কাজ করেছেন, এমন কেউ -- তাঁকে দিয়ে রিভিউ করিয়ে নিবেন। আমি শুরুতে অনেকটা সংকোচ থেকেই সেটা করিনি। ফলস্বরূপ ডাক পাচ্ছিলাম না। পরে যখন আমার দুই ফ্যাকাল্টি বন্ধু, শাফায়েত আর আবিরকে দেখালাম, আবির তো সরাসরি বলেই দিয়েছিলো: "তোর এই লেখা কেউ খাবে না"! পরে ওঁদের সাহায্য নিয়ে ঠিকঠাক করে বাকি জায়গায় পাঠানোর পরে অনেকগুলো ইন্টারভিউ কল পেয়েছি।
- আপনি আগে কোথাও পড়িয়ে থাকলে, সেখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের এভালুয়েশন যদি ভালো হয়ে থাকে, তবে সেটাও জমা দিতে পারেন।
ধাপ ২: প্রথম স্কাইপ কিংবা জুম ইন্টারভিউ কল:
আপনার রেসুমে সহ অন্যান্য কাগজপত্র সার্চ কমিটির পছন্দ হলে, সেই কমিটির চেয়ার আপনাকে পরের ধাপ, অর্থাৎ স্কাইপ কিংবা জুম ভিডিও ইন্টারভিউয়ের জন্য ইমেইল পাঠাবেন। তারিখ আর সময় ঠিক করবেন। তারপর তৈরী হবেন।
যা করা উচিত:
- আপনার রেসুমে থেকে যেকোনো বিষয়ের উপর জিজ্ঞেস করতে পারে। তাই প্রথমেই সবগুলো পয়েন্ট, বিশেষ করে আপনি কোথাও আগে পড়িয়ে থাকলে, সেটা সম্পর্কে প্রশ্নের জন্য রেডি থাকবেন।
- ক্লাসে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রী, নকল করলে কি করবেন, বিভিন্ন জাতি-বর্ণের ছাত্র-ছাত্রী আপনি কিভাবে সামলাবেন, অনলাইনে পড়াতে হলে কি করবেন -- ইত্যাদি বিহেভিওরাল প্রশ্নের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন।
- যদি আপনাকে নিয়োগ দেয়া হয়, তবে আপনি কি কি কোর্স পড়াতে চান বা পড়াতে পারবেন - এটাও একটা খুব কমন প্রশ্ন।
- সব প্রশ্নের উত্তর সংক্ষেপে, গুছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। একজন প্রশ্ন করলো, তো আপনি ৫-৬ মিনিট ধরে একাই কথা বলে যাচ্ছেন - সেটা মোটেও ঠিক না। চেষ্টা করবেন ২-৩ মিনিটের মধ্যে উত্তর দিয়ে দরকার হলে ডিসকাস করবেন - সার্চ কমিটি আরো ডিটেলস এ ব্যাপারে জানতে চান কিনা, জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।
- হাসি মুখে, যতটুকু সম্ভব রোবটের মতো না হয়ে উত্তর দিবেন। মনে রাখবেন, সার্চ কমিটি আপনাকে তাঁদের কলিগ করবেন কিনা - মাথার পেছনে এই প্রশ্ন সব সময় রেখেছেন। সুতরাং, যতটুকু ফ্রেন্ডলি ভাবে উত্তর দিবেন।
- কোনো প্রশ্ন না বুঝলে, বিনীত ভাবে জিজ্ঞেস করাতে কোনো দোষ নেই। সার্চ কমিটিতে অনেকে দেশি মানুষ থাকেন, সবার কথার উচ্চারণ, বলার ধরন, গতি এক না - কাজেই কারো কথা না বুঝলে, 'দুঃখিত, আপনার কথা ঠিক ধরতে পারিনাই, আরেকবার বলবেন কি?" - জিজ্ঞেস করে নিতেই পারেন।
- আপনি ক্লাসে শুধু পড়াবেনই না - ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকেও শিখতে চান, তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে নিজের পড়ানোর উন্নতি করতে চান, আপনি বিশ্বাস করেন শিক্ষাটা দ্বিমুখী -- এই কথাটা অনেকেই খুব পছন্দ করে দেখেছি। বলতে পারেন।
- ইউনিভার্সিটি, ডিপার্টমেন্ট ইত্যাদি সম্পর্কে আগেই জেনে রাখবেন। ইন্টারভিউয়ের শেষের দিকে আপনার কোনো প্রশ্ন আছে কিনা - এটা জিজ্ঞেস করবেই। তখন "না, আমার কোনো প্রশ্ন নাই" - বলাটা খুবই নেগেটিভ। তখন আপনি তাদের ইউনিভার্সিটি; ক্লাসে স্টুডেন্ট সংখ্যা কেমন; কোর্স লোড কি; গবেষণা, পড়ানো, আর সার্ভিস - ইত্যাদির পার্সেন্টেজ কেমন ইত্যাদি জিজ্ঞেস করতে পারেন।
ধাপ ৩: অন-সাইট ইন্টারভিউ, ক্যাম্পাস ভিসিট :
আপনার স্কাইপ বা জুম ইন্টারভিউ ভালো হলে, আপনি শর্ট লিস্টেড হলে ধাপ ৩ -এর জন্য ডাক পাবেন। ধাপ ৩ এ মূলত আপনি ওদের ক্যাম্পাসে মোটামুটি ৫-৬ ঘন্টার জন্য যাবেন। এই ধাপে সাধারণত আপনাকে একটা টিচিং আর আরেকটা রিসার্চ লেকচার দিতে হবে। লেকচারের বিষয় সচরাচর আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে, যাতে তুলনা করতে সুবিধা হয়, সার্চ কমিটি আপনাকে একটা বিশেষ বিষয়ের উপর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে একটা ৩০-৪০ মিনিটের টিচিং লেকচার দিতে বলতে পারে। তবে, রিসার্চ লেকচার আপনি আপনার কাজের উপর দিতে পারবেন।
এই লেকচার দেয়ার পর, আপনাকে ফ্যাকাল্টি ডিন আর ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলরের সাথে মিটিং করতে হবে। সম্ভাবনা আছে, এর আগে বা পরে আপনাকে নিয়ে লাঞ্চ করবে। এই মিটিং গুলোতে 'খাজুরে" আলাপই বেশি হয়। ডিন আর চ্যান্সেলর উনাদের ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলাপ করেন, আপনার সম্পর্কে আবারো জানতে চাবেন, আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে উত্তর দিবেন।
যা করা উচিত:
- টিচিং এবং রিসার্চ লেকচার ইন্টারেক্টিভ করতে হবে। ৩০ মিনিট ধরে আপনি একাই কথা বলে যাবেন, আর শেষে সবাই প্রশ্ন করবেন - এটা করা ঠিক হবে না। সবার চোখে চোখ রেখে, হাসিমুখে, ইন্টারেষ্টিং লেকচার দিতে হবে। খুব কঠিন কোনো বিষয়ে লেকচার না দেয়াই ভালো। মনে রাখবেন, ওরা দেখতে চাচ্ছে, আপনার ক্লাস নেয়ার স্টাইল, টপিক না। তাছাড়া মনে রাখবেন, যাদের উদ্দেশ্যে লেকচার দিচ্ছেন, সেই ছাত্র-ছাত্রীরা আপনার সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত ভাবে ফিডব্যাক দিবে। কাজেই, সবাই বুঝতে পারে, রিলেট করতে পারে এমন বিষয়ের উপর, থেকে থেমে, ইন্টারেক্টিভ ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করবেন।
- লাঞ্চে গেলে আপনাকে কাঁটা-চামচ, ছুরি দিয়ে খাবার খেতে হবে। কাজেই আগে থেকে প্রাকটিস করে নিবেন। আমাদের অনেকেই খাবার শব্দ করে খান। চিবোনোর সময় শব্দ না করে খাওয়া প্র্যাক্টিস করবেন। আর একটা ব্যাপার, খাবার মেনু থেকে অর্ডার দেয়ার সময় বুঝে অর্ডার দিবেন। আমি হালাল খাবো দেখে একবার পাস্তা অর্ডার দিয়েছিলাম। সে কি ঝামেলা! লম্বা লম্বা পাস্তা কাঁটা চামচ দিয়ে পেঁচিয়ে মুখে দেয়ার মতো কষ্টের কাজ আর নাই। ওই লাঞ্চের পর আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমার আর চাকরি হবে না। অবশ্য তারপরও যেহেতু অফার পেয়েছিলাম, এইটা হয়তো অতটা গুরুত্বপূর্ণ না - তাও সাবধানের মার্ নেই।
শেষ ধাপ, চাকরির অফার:
অভিনন্দন, আপনি চাকরির অফার পেয়েছেন। এইবার আপনার স্যালারি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে আলাপ হবে। সার্চ কমিটির চেয়ার, ইউনিভার্সিটির ডিন কিংবা চ্যান্সেলর আপনার সাথে আলাপ করতে পারেন। এই ধাপে এসে আপনার চাকরি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু এই ধাপে ঠিকমতো কথা বা নিগোশিয়েট না করলে আপনি অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হতে পারেন।
যা করা উচিত:
- অবশ্যই বেতন নিয়ে নিগোশিয়েট করবেন। আমরা বাংলাদেশিরা একটু বেশি লজ্জা পাই। লজ্জা পাবেন না। ধরে নিন, আপনি কারো এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন। দরকার হলে, সেটা চিন্তা করেই বেতন নিয়ে নিগোশিয়েট করবেন। আপনি বেশি চাইলে, আর যাই হোক, আপনার চাকরির অফার চলে যাবে না। বড়জোর, "এই বেতন চাইলেও আমরা দিতে পারছি না" - টাইপ কিছু বলে আপনাকে থামাবে।
- স্টার্ট-আপ ফান্ড অবশ্যই আলাপ করে নিবেন। আপনার কাছ থেকে হয়তো একটা বাজেট চাইতে পারে, সেটা দেয়ার জন্য প্ৰয়োজনে সময় নিবেন। কিন্তু অবশ্যই চেষ্টা করবেন টাকার পরিমান বাড়িয়ে নিতে। পরবর্তীতে কম্পিউটার কেনা, ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন দেয়া, কনফারেন্সে রেজিস্ট্রেশন, যাওয়ার খরচ হয়তো আপনাকে এই ফান্ড থেকেই দিতে হবে যতদিন আপনি বাইরে থেকে নিজে কোনো ফান্ড আনতে না পারছেন। কাজেই ....
- ইমিগ্রেশন'র ব্যাপারে খোঁজ নিন। ওরা স্পনসর করবে কিনা, করলে কবে, কতদিনের মধ্যে শুরু করবে ইত্যাদি বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
- হেলথ ইন্সুরেন্স, রিটায়ারমেন্ট ম্যাচিং প্ল্যান - ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা সাধারণ আগে থেকেই ফিক্সড থাকে। আপনাকে কাগজপত্র পাঠিয়ে দিবে। দেখে নিন। দরকার হলে অন্যদের সাথে পরামর্শ করুন।
- অফার একসেপ্ট করার আগে, ইউনিভার্সিটি আশেপাশের থাকার পরিবেশ, আপনার বাচ্চা থাকলে স্কুলের রেটিং, সিটি ট্যাক্স আছে কিনা, বাঙালি কমিউনিটি, দোকান, (যদি আপনি ধার্মিক হন) মসজিদ/মন্দির আছে কিনা ইত্যাদির খোঁজ নিন। সবচেয়ে ভালো হয়, আপনার ভবিষ্যত ডিপার্টমেন্টের কলিগদের সাথে কথা বলে নিন। চেষ্টা করুন বুঝতে, তাঁরা আসলেই এইখানে কাজ করে খুশি কিনা।
শেষ কথা:
আমি পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নিতান্ত ছোট একটা ক্যাম্পাসে পড়াই। মূলত আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কুল। রিসার্চের তেমন কোনো চাপ নাই, বাইরের ফান্ড আনারও তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নাই । কাজেই বড় রিসার্চ ইউনিভার্সিটির নিয়োগ পদ্ধতি নিশ্চই ভিন্ন হবে, আমার তা জানার কথা না। তবুও নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য লিখলাম। তাছাড়া কিছুদিন হলো প্রথমবারের মতো একটা ফ্যাকাল্টি সার্চ কমিটিতে কাজ করছি। সেটার অভিজ্ঞতা থেকেও ভাবলাম কিছু লিখি। ভুল পেলে বা আরো কিছু আপনার জানা থাকলে জানাবেন, ধন্যবাদ।