আফসোস সমগ্র এবং ...

আফসোস সমগ্র এবং ...
অগাস্ট ১৭, ২০১৭, বৃহস্পতিবার


আজকের লেখায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ব্যক্তিগত একাডেমিক কিছু আফসোস, ভুল, না-পাওয়া বিষয় নিয়ে লিখবো।  কাউকে আক্রমণ করে লিখবো না।  সাধারণতঃ আমি কিছু লিখলে ডিপার্টমেন্টের ফেইসবুক গ্র্রুপ -এ পোস্ট করি, আজকে ঠিক করেছি তাও করবো না।  লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে লেখাটা পড়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে এমন কেউ যদি নিজের সাথে  মিল পেয়ে যায়, তাহলে লেখার শেষে দেয়া কিছু টিপস আর লিংক থেকে হয়তো কিছুটা উৎসাহ পাবে।

আফসোস - ১: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় আমি উপরের দিকে ছিলাম না। অন্তত আমাদের সময় কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার জন্য প্রথম ১০০ - ২০০ -এর  ভেতর থাকতে হতো। আমি ছিলাম না।  একটা বড় আফসোস ছিল ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিং না করা।  আব্বা করতে দেন নাই।  উনার বদ্ধমূল ধারণা কোচিং - এ নাকি খালি আড্ডাবাজি হয়, পড়াশুনা হয় না। তবে যেকোনো প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষার জন্য কম সময়ে সঠিক উত্তর দিতে পারার টেকনিক শিখতে হয়।  কোচিং -এ আর কিছু না হোক, সেরকম কিছু টেকনিক আর বাকিরা কিভাবে প্রস্তূতি নিচ্ছে তা হয়তো জানা যেত, সেটা করলে হয়তো আমি নিজের যোগ্যতায় কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে পারতাম। আব্বা ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে সন্তানের কোটা ব্যবহার করে পরে আমি নিজের যোগ্যতায় পাওয়া সাবজেক্ট বদলিয়ে  কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়ার সুযোগ পাই। আব্বা বেশ হতাশ হয়েছিলেন -  এই আফসোস আমার থাকবেই।

আফসোস - ২: আব্বার সম্পর্কে আরেকটু বলি। আব্বা ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের রসায়নের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।  বেশিদিন হয়নাই আব্বা অবসর নিয়েছেন। আমি ঢাকা বিশবিদ্যালয়ে  পড়ার সময় আব্বা সার্ভিসে ছিলেন। আব্বাকে সবসময় দেখতাম ক্লাসে যাওয়ার আগে পড়াশুনা করছেন। নোট নিচ্ছেন। এইসব দেখেই সবসময় ভাবতাম ইউনিভার্সিটির একেকটা ক্লাস হবে "সেই রকম" লেভেলের। জ্ঞানগর্ভ, প্রতিক্লাসেই নতুন কিছু শিখবো।  ক্লাস শুরুর কয়েকদিন পরেই, ২-১ টা ব্যতিক্রম ছাড়া, সেই স্বপ্ন চরম ভাবে ধাক্কা খেলো।  আফসোস!!

আফসোস -৩: এইটা আফসোস না বলে ভুল বলা উচিত।  আমার ধারণা ছিল বিভাগের প্রতি বছরের সিলেবাস ঠিকমতো, যতটুকু পারা যায় - ভালো ভাবে পড়লেই হবে।  সিলেবাস তো নিশ্চই অনেক ভেবে চিন্তে করা।  কোর্সের পাঠ্য বই আর ক্লাস ভালো করে ফলো করলে ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। বাইরের বই, কম্পিউটার ম্যাগাজিন, কোডিং প্র্যাক্টিস, প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট  - এইসব না করলেও চলবে।  চরম ভুল।  চরম ভুল বললেও আসলে কম হবে।  চরম বোকামি।

আফসোস - ৪: ফার্স্ট ইয়ার, এমনকি সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত বাসায় কম্পিউটারে ইন্টারনেট ছিল না। মনে আছে,  প্রি-পেইড কার্ড দিয়ে মডেম ব্যবহার করে, বাসার ফোন এনগেজ রেখে শুধু ইমেইল চেক করা, টুকটাক ব্রাউজিং করার মধ্যেই  সব সীমাবদ্ধ ছিল। ডিপার্টমেন্টের ল্যাবে গিয়ে ইন্টারনেট খুব বেশি ব্যবহার করা হতো না।  শেষমেষ, থার্ড ইয়ারে উঠে মনে হয় বাসায় ধীর গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন নেয়া হলো।  ইন্টারনেটে তখন খুব বেশি কোর্সের ম্যাটেরিয়াল না থাকলেও, উচিৎ ছিল প্রতিটা কোর্সের ব্যাপারে দুনিয়ার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পড়ানো হচ্ছে - তা ঘাঁটাঘাঁটি করা।

আফসোস - ৫: এলগোরিদম আর ডাটা স্ট্রাকচার - কম্পিউটার বিজ্ঞানের মূল কয়েকটা বিষয়ের দুটো।  ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে থার্ড ইয়ারে এলগোরিদম পড়তে গিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে থাকতাম। একটা সাবজেক্টের প্রতি ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার মতো খারাপ কাজ সম্ভবত আর নাই।  আমাদের পড়ানোর সময় তাই করা হয়েছিল।  পিএইচডি করতে আমেরিকাতে এসে বাধ্য হয়ে যখন UTA -র প্রফেসর ড.গৌতম দাসের এলগোরিদম ক্লাস নিয়েছিলাম - শেষে তখন ভয়টা কাটলো।  এলগোরিদম যে কী মজার একটা সাবজেক্ট  হতে পারে উনার ক্লাস না করলে হয়তো জানতামই না।

আফসোস - ৬: আমেরিকায় পিএইচডি করতে এসে মাস্টার্সের কিছু কোর্স নেয়া বাধ্যতামূলক।  সেইসব কোর্সের প্রজেক্ট-এ বড় বড় কোড করতে হতো।  উদাহরণ দিয়ে বলি, কম্পাইলার কোর্সে একটা কম্পাইলার বানাতে হবে!! তবে মজার ব্যাপারটা হলো, কম্পাইলারের একটা টেম্পলেট কোড প্রফেসর-ই সবাইকে দিয়ে দিলেন। কোডের কোথায় আমাদের কাজ করতে হবে তাও বলে দিলেন। একদম শুরু থেকে বা স্ক্র্যাচ থেকে কোড করার প্রশ্নই ওঠে না।  কাজ করতে গিয়ে অন্য কোনো জায়গা বা কোড থেকে হেল্প নিতে কোনোই আপত্তি নাই, শুধু নিলে তা সাইট বা রেফার করতে হবে। সবাই একদম "নিজে থেকেই সব" করতে হবে - এমন কোনো কথা নেই!! এতে করে আমাদের কিন্ত কম খাটাখাটনি করতে হয়নি। টেমপ্লেটের কোড বুঝে, অন্য জায়গা থেকে নেয়া কোড নিলে তা বুঝে ব্যবহার করতে হয়েছে।  অন্যের কোড দেখেও যে কোডিং শেখা যায় - তখন তা বুঝেছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় নিয়ম ছিল সব কিছুই শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। অন্য কারো কোড ব্যবহার করা নিষেধ ছিল।  যার ফলে যেকোনো প্রজেক্ট করা একটা আতংক ছিল।  কয়েকজন বাদে বেশির ভাগই অন্যের কোড চুরি করে নিজের বলে চালাতো। ব্যাপারটা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। আফসোস! এরকম হওয়ার কথাই না।

আফসোস - ৭: মাইনোর কোর্স গুলোতে বলতে গেলে কিছুই শিখি নাই।  ক্যালকুলাস, লিনিয়ার এলজেব্রা, স্ট্যাটিসটিক্স সহ বেশির ভাগ কোর্স গুলো শুধু পাস করার জন্য বা নম্বর পাবার জন্য পড়েছি। কম্পিউটার বিজ্ঞানে এগুলোর যে কী প্রয়োজন  তা ভাবার বা বলার কেউ ছিল না। অনেক ক্ষেত্রে এটা ডিপার্টমেন্টের মেজর কোর্স গুলোর বেলায়ও সত্যি। এমন একটা কোর্স হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই। ফোর্থ ইয়ারের এই কোর্সে আমি আক্ষরিক অর্থেই কিছুই শিখি নাই। আমার বিশ্বাস ব্যাচের অন্যরাও বেশি কিছু শিখে নাই।  আফসোস!  এই সাবজেক্ট গুলোর যে কী কদর এখন তা জানি।

আফসোস - ৮: চার বছরের স্নাতক কোর্স আমরা (রেজাল্ট বের হওয়া নিয়ে) প্রায় সাত বছরে শেষ করেছি। জ্বী, ঠিকই পড়ছেন। ৪ বছরের ডিগ্রি আমরা ৭ বছর লাগিয়ে করেছি। হারিয়ে যাওয়া এই ৩ টা বছরে কত কিছুই করা সম্ভব ছিল - আফসোস!

যাক, আর আফসোসের কথা না বাড়াই। না-পাওয়ার জায়গায় এইবার কিছু পাওয়া জিনিসের তালিকা দেই।  প্রায় ফ্রীতে স্নাতক পাস করতে পেরেছি দেশের মানুষের টাকায়।  ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের পরিবেশ পেয়েছি। আমেরিকাতে প্রতি সেমিস্টারে যার যেই কোর্স ইচ্ছা নেয়ার সুযোগ থাকায় এখানকার ছাত্রছাত্রীরা খুব বেশিদিন একসাথে সবাই থাকে না।  এক সেমিস্টারে কয়েকজন একসাথে ক্লাস নিলো তো পরের সেমিস্টারে নতুন লোকজনের সাথে ক্লাস নিতে হয়। কাজেই ব্যাচের ব্যাপারটা এদের মধ্যে একদমই নেই। আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচে - ব্যাচে যে সুস্থ রেষারেষি, প্রতিযোগিতাটার মজার ব্যাপারটা আছে, সেটা এখানে নেই,  শূন্য। এরা কোনোদিনও তা জানবে না। আমি আমার ব্যাচের প্রায় ৫৩ জন বন্ধু পেয়েছি যাদের (২-১ জন বাদে) সবার সাথে আবারো ৭ বছর কাটিয়ে দিতে আপত্তি নাই। গ্রূপ স্টাডি করে যা শিখেছি তা ১০০ টা ক্লাস লেকচারেও শেখা সম্ভব ছিল না। দেশে কোনো কোনো শিক্ষকের ক্লাসে অনেক কিছু শিখেছি। তাঁদের কোর্স করে এসে আমেরিকায় মাস্টার্সের ক্লাসে খুব সুবিধা হয়েছিল। তাঁদেরকে ব্যক্তিগত ভাবে ইমেইল দিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম। সবশেষে নেটওয়ার্ক! ব্যাচমেট, সিনিয়র - জুনিয়র মিলিয়ে দুনিয়ার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়, কোম্পানিতে পরিচিত লোকজন আছে - যাঁরা উচ্চশিক্ষা বা চাকরি - সবক্ষেত্রেই সবসময় সাহায্য করার জন্য রেডি। আর কী চাই? আলহামদুলিল্লাহ।

আর নতুনদের জন্য বলি: উপরের আফসোসের লিস্টের বেশির ভাগই এখন আর প্রযোজ্য না।  দ্রুতগতির ইন্টারনেট আর ফ্রীতে এতো এতো চমৎকার সব কোর্স আছে যে, শিখতে চাইলে এখন আর কোনো কিছুই বাধা না।  আর কী শিখতে হবে সেটা নিয়ে ভাবছো? গুগলের এই লিস্টে খুব সুন্দর করে প্রথম থেকে কী কী শিখতে হবে, কোথা থেকে ফ্রীতে শেখা যাবে তার তালিকা করা আছে।  ইংরেজিতে শিখতে কঠিন লাগলে, শিক্ষক.কম থেকে বাংলায়ও বিভিন্ন বিষয় শিখে নিতে পারো। আর বিভিন্ন লেখকের বাংলায় লেখা দ্বিমিক প্রকাশনীর বইগুলো খুব ভালো।

সবশেষ আফসোস: আমাদের সময় যদি এত চমৎকার সব ম্যাটেরিয়াল থাকতো!

ধন্যবাদ।
--ইশতিয়াক।


1 comment:

  1. Thanks for sharing quality
    will help you more:
    谷歌优化,baidu seo,谷歌seo,外贸网站建设,独立站引流,海外推广,web development outsourcing China ,web design ,web design China,谷歌推广,外贸英文网站建设,谷歌优化最牛的公司,谷歌排名,英文网站翻译,西安facebook营销,上海谷歌优化,上海谷歌seo,北京谷歌优化,facebook,北京谷歌seo
    外贸网站建设

    ReplyDelete

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম  ৩ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, ২০২৪ রেগুলার এক্সপ্রেশন (Regular Exp...