"পিএইচডি প্রায় শেষ করে ফেলেছি, এরপর কী হবে?"

"পিএইচডি প্রায় শেষ করে ফেলেছি, এরপর কী হবে?"

ডিসেম্বর ২৬, বৃহস্পতিবার, ২০১৯

ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র, আশীষ চন্দের সাথে একটা কাজে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আশীষ ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছে।  কথা প্রসঙ্গে বলছিলো যে আমার ব্লগ পোস্টগুলা নাকি ও পড়ে।  আমিও বললাম যে, আমার এই ব্লগ লেখার পেছনে ওর ভূমিকা আছে।  শুরুতে Google Doc -এ নোট আকারে লিখে রাখতাম। আশীষ বলার পরেই ব্লগ পোস্ট আকারে লেখা শুরু করেছিলাম। আশীষ বলছিলো আমেরিকায় পিএইচডি করতে আসার আগে কিভাবে SOP লিখতে হয়, কিভাবে এপ্লাই করতে হয়, GRE /TOEFL স্কোর কেমন হওয়া লাগে -  ইত্যাদি নিয়ে অনেক জায়গায়ই বেশ লেখালেখি আছে, কিন্তু পিএইচডি শেষের দিকে কিংবা শেষ করার পর কিভাবে চাকরি খুঁজতে হবে, ভিসার ব্যাপার-স্যাপার কী - ইত্যাদি নিয়ে লেখা ওর চোখে পড়ে নাই। আমি লিখছিনা কেন - সেটাও জিজ্ঞেস করলো। ওর সাথে এসব নিয়ে অনেকক্ষন আলাপ করলাম, ভাবলাম নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে লিখেই ফেলি একটা ব্লগ পোস্ট।



সুতরাং, আজকের লেখাটা ওই বিষয়ের উপরই, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং উপর না।বরাবরের মতো আগেই বলে নিচ্ছি, আমি এই ব্যাপারে মোটেও কোনো পন্ডিত, সবজান্তা না।  শুধু নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সমসাময়িক বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দেখে, শুনে কিছু উপলব্ধি শেয়ার করার জন্য লিখছি, যদি কারো উপকার হয় - খারাপ কী?

প্রশ্ন - উত্তর আকারেই লিখছি। বলে রাখি, প্রশ্নগুলো কোনোভাবেই আশীষের করা না:

"চাকরির জন্য পিএইচডি শেষ করার আগে কী করণনীয়?"
অবশ্যই ইন্টার্নশীপ। অন্তত পক্ষে একটা, আরো বেশি করতে পারলে আরো ভালো। কারণ কি? একটু ভেবে দেখুন, একটা কোম্পানি আপনাকে শুধু চাকরি দেয়না, আপনার উপর ইনভেস্টও করে। চাকরির শুরুতে প্রোবেশন পিরিয়ড থাকলেও, কাউকে চাকরি দিয়ে ছাঁটাই করাটা ওতো সহজ না। কোনো টেকনোলজি শিখে নিতে কারো কমবেশি সময় লাগতেই পারে, কিন্তু একটা কোম্পানির কালচারের সাথে আপনি খাপ খাওয়াতে পারেন কিনা, আপনি টীম প্লেয়ার হিসাবে কেমন, আপনার কমিটমেন্ট, ডেডিকেশন কোন লেভেলের - ইত্যাদি অনেক বিষয়ই আসলে ইন্টারভিউ থেকে বোঝা যায় না, কাজ করতে গেলেই বের হয়ে আসে। এই অবস্থায় আপনার একটা কিংবা তার বেশি ইন্টার্নশীপ করা থাকলে আপনাকে নিতে কোনো কোম্পানির অনেক সুবিধা, এসব নিয়ে ওদের তখন আর চিন্তা করতে হয় না, বেশ অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েই আপনাকে কাজে নিতে পারবে। তাছাড়া, আপনার ইন্টার্নশীপের ম্যানেজারদের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার পাওয়াটাও দুপক্ষের জন্যই একটা বিরাট প্লাস।



"আমি কোডিং-এ বেশি ভালো না, ইন্টার্নশিপের ইন্টারভিউ দিয়ে পারবো কি?"
পারবেন। এ ব্যাপারে আমার এক দুলাভাইয়ের একটা ডায়ালগ শেয়ার করছি। উনার নাম মাহবুব রহমান। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স থেকে পাশ করে, পরে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করে ২০০১ -এ আমেরিকায় আসেন।অনেক স্ট্রাগল করে এখন প্রতিষ্ঠিত। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিতে -এ সফটওয়্যার আর্টিটেক্ট হিসাবে আছেন। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আমি কোডিং-এ বেশি ভালো না, ভয় পাই শুনে এই ভদ্রলোক একটা ডায়ালগ দিয়েছিলেন। অনেকটা এইরকম: কম্পিউটার সাইন্স পড়ে কোডিং এ ভয় পাওয়া, আর সার্জন হয়ে অপারেশন করতে ভয় পাওয়া নাকি অনেকটা একই রকম, ব্যাপারটা নাকি যায় না!! কথাটা কতটুকু সত্য সেই তর্কে না গিয়ে বরং বলি, কোডিং-এ ভালো করার জন্য প্রাক্টিসটাই আসল। আর ইন্টার্নশীপ পাওয়ার জন্য খুব বেশি ভালো না হলেও বোধহয় চলবে। কারণ, কোম্পানিগুলোর এক্সপেকটেশন স্টুডেন্টদের কাছ থেকে এমনিতেই বেশ কম থাকে। আর একটু প্ল্যান করে ২-৩ মাস সিরিয়াসলি প্রাকটিস করলে ইন্টার্নশিপ পাওয়া সম্ভব। এই নিয়ে আগে একটা ব্লগ লিখেছিলাম, সেটার লিংক দিয়ে দিচ্ছি, আশাকরি উপকারে আসবে।


"একটা ইন্টার্নশীপ ইন্টারভিউ দিসি, কিন্তু হয় নাই, হবেও না মনে হয়"
আমার খুব পরিচিত এক বন্ধুর মাইক্রোসফটে ইন্টারভিউ দিয়ে হয় নাই, কিন্তু আবার Google -এ ইন্টারভিউ দিয়ে ইন্টার্নশীপ হয়েছে। Google -র ইন্টারভিউ কিন্তু Microsoft থেকে কঠিন। একই ভাবে, আমার এক পরিচিত, বুয়েটের মেয়ে, Microsoft -এ ফুলটাইম কাজ করা অবস্থায় চাকরি খুঁজছিলো। তার Google -এ ইন্টারভিউ দিয়ে হয় নাই, কিন্তু আবার Facebook -এ ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি হয়েছে। খুঁজলে এইরকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।  আসল কথা হচ্ছে, একটা ইন্টারভিউ দিয়ে না পারলে কিছুই যায় আসবে না। আসল কথা হচ্ছে লেগে থাকতে হবে, প্রাকটিস করতে হবে। একটাতে হয় নাই, আরো ভালো কোনো জায়গায় পরে হবে।


আমার প্রফেসর খুব কড়া, ইন্টার্নশীপ করা মোটেও পছন্দ করেন না। আমাকে করতে দিবে কি?
কোনো প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করলে মনে হয়না কখনোই রাজি হবে। সামারের সময়ই আসল রিসার্চ হয়, বাকি সময় ক্লাস, টি-এ শীপের কাজের জন্য ব্যস্ত থাকা হয়, কোনো কাজ হয় না - টাইপ ডায়ালগ দিয়ে দিবে। সুতরাং, জিজ্ঞেস করার দরকার নাই, চুপচাপ ইন্টার্নশিপের প্রিপারেশন নিয়ে, ইন্টারভিউ দিয়ে, অফার পেয়ে তারপর একটু গো-বেচারা টাইপ চেহারা নিয়ে গিয়ে বলতে হবে: এমনিই ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, ওরা তো অফার করে বসছে - কি যে করবো, বুঝতে পারছি না। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, একবার ইন্টার্নশীপ অফার পাওয়ার পর আপনার প্রতি প্রফেসরের চাহুনি বদলে যাবে। বিশেষ "পাত্তা" দিয়ে কথা বলা শুরু হবে। একটা ভালো কোম্পানিতে কোনো  স্টুডেন্টের ইন্টার্নশীপ পাওয়াটা প্রফেসরের জন্যও গর্বের। তাছাড়া প্রফেসরের জন্য ভবিষ্যতে ভালো স্টুডেন্ট পেতেও সুবিধা। কারো স্টুডেন্ট "অমুক" কোম্পানিতে কাজ করেছে বা করছে - এটা কিন্তু নতুনদের জন্য বিরাট মোটিভেশন। কাজেই অসম্ভব রকম ঘাড়-তেড়া না হলে, ইন্টার্নশীপ পেলে আপনার প্রফেসরের আর না করার কথা না।

[সাইড নোট: একটা ইন্টার্নশীপ পেলে ব্যাচেলর হলে বিয়ের বাজারে, আর বিবাহিত হলে শশুর বাড়িতেও আলাদা দাম পাওয়া যায় :) ]


আমার পিএইচডির এটাই শেষ সেমিস্টার, এখন কি আর ইন্টার্নশীপ করা সম্ভব?
অনেক ইউনিভার্সিটিতেই ইন্টার্নশীপ শেষ করে এসে একটা ফুল সেমিস্টার স্টুডেন্ট থাকতে হয়, অর্থাৎ শেষ সেমিস্টার ইন্টার্নশীপ হতে পারবে না - এইরকম একটা নিয়ম আছে। UT Arlington -এও ছিল (এখনো আছে সম্ভবত)। আমার বেলাও তাই হয়েছিল। আমি ব্যাপারটা জানতাম না।  Microsoft -এ ইন্টার্নশীপ পেয়েও করতে পারবো না, এইরকম একটা অবস্থা হয়েছিল। অসম্ভব রকম মন খারাপ হয়েছিল। আমার প্রফেসর খুব নীতিবান আর কড়া ছিলেন। আমার কল্পনাতেও ছিলো না যে উনি আমাকে আরো এক সেমিস্টার এক্সটেন্ড করার অনুমতি দিবেন। এমনকি কেন পিএইচডি শেষ করতে আরো দেরি হবে, এমন একটা ব্যাখ্যাও উনাকে লিখে গ্রাজুয়েট স্কুলে জমা দিতে হয়েছিল। ভদ্রলোক আমাকে চির কৃতজ্ঞ করে লিখে দিয়েছিলেন। আমি ২০১৩ সামারে ইন্টার্নশীপ করে ফিরে এসে Fall -এ থিসিস ডিফেন্ড করেছিলাম, আর গ্রাডুয়েশন নিয়েছিলাম Spring ২০১৪ তে। আসল কথা যেটা বলতে চাচ্ছি, সেটা হলো, শেষ সেমিস্টার পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগেই ইন্টার্নশীপ করা উচিত। আর নেহায়েত দেরি হয়ে গেলেও, প্রফেসরকে ম্যানেজ করতে পারলে সেটাও সম্ভব।

সাইড নোট: অনেক ইউনিভার্সিটিতে ইন্টার্নশিপের সংখ্যার লিমিট থাকে। যেমন, UT Arlington -এ নিয়ম ছিল, প্রতি ডিগ্ৰী প্রোগ্রামে একজন স্টুডেন্ট সর্বোচ্চ ২ টা ইন্টার্নশীপ করতে পারবে। তাই সেটা মাথায় রেখে আগে থেকেই প্ল্যান করা উচিত, পিএইচডির প্রথম ২-৪ বছরেই ইন্টার্নশীপ করে ফেলা উচিত। শেষ বছরে এসে, কাজের প্রেসার যখন অনেক তখন ২ টা ইন্টার্নশীপ করার ইচ্ছাটা আসলে যৌক্তিক না।


পিএইচডি শেষ করার কত আগে জব সার্চ করা উচিত?
আমি বলবো, শেষ হওয়ার ১ বছর আগেই।  জব সার্চ, ইন্টারভিউ প্রিপারেশন এগুলো অনেক খাটনির কাজ।  শেষ সেমিস্টারে এসে থিসিস লেখার প্রেসার যখন তুঙ্গে, তখন নতুন করে সবকিছু করা খুবই কঠিন। তাই বেশ আগে থেকেই ইন্টারভিউ প্রিপারেশন, জবে এপলাই করে রাখা উচিত। আইডিয়াল সিচুয়েশন হচ্ছে: কোনো একটা ইন্টার্নশীপ করে (সরি, ঘুরে ফিরে সেই একই কথা - ইন্টার্নশীপ) সম্ভব হলে সেখানেই একটা জব অফার ম্যানেজ করে রাখা। এতে করে সবকিছুই অনেক সহজ হয়ে যায়।  ফ্রি মাইন্ডে তখন অন্য জায়গায় যেমন ইন্টারভিউ দেয়া যায়, নতুন কোম্পানি গুলোর সাথে নিগোসিয়েশনেও অনেক সুবিধা হয়।


আমি একাডেমিয়াতে ফ্যাকাল্টি পজিশনে যাবো, ইন্ডাস্ট্রিতে যাবো না, তাহলে?
প্রথম কথা হচ্ছে, ইন্ডাস্ট্রিতে চেষ্টা করতে দোষ কি? ইন্টারভিউ প্রিপারেশন, ইন্টারভিউ দেয়াটা সব সময়ই একটা বিরাট অভিজ্ঞতা। আপনি যদি একদমই ১০০% মনস্থির করে ফেলেন, তাহলে ভিন্ন কথা, তা না হলে ইন্ডাস্ট্রির অপশন খোলা রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর একাডেমিয়াতে যাবার জন্যও ১ বছর আগে থেকেই চেষ্টা করা উচিত। ইউনিভার্সিটিগুলো পিএইচডি ক্যান্ডিডেট (PhD Candidate, অর্থাৎ যাদের শুধু থিসিস ডিফেন্ড করা বাকি)- দের ফ্যাকাল্টি পজিশনের জন্য ইন্টারভিউতে ডাকে। অগ্রিম ফ্যাকাল্টি পজিশন অফার করতেও আমি দেখেছি।


আচ্ছা, একাডেমিয়াতে ফ্যাকাল্টি পজিশনে যাওয়ার সিসটেম কি? কি কি স্টেপ পার করতে হয় ?
এইটা নিয়ে একটা পুরো ব্লগ পোস্ট লেখা যাবে। ভবিষ্যতে পারলে লিখবো।  শুধু সংক্ষেপে বলে রাখি, একটা ডিটেলস রেসুমি লিখতে হয়।  ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন ১-২ পৃষ্ঠার বেশি বড় রেসুমি দেয়া যায় না, একাডেমিয়াতে ঠিক তার উল্টো, ৭-৮ পৃষ্ঠার রেসুমি খুবই কমন একটা ব্যাপার। টিচিং রিলেটেড প্রায় সব কিছু দিতে হয়, যেমন TA থাকা অবস্থায় কোন কোনো course ম্যানেজ করেছেন, পড়িয়ে থাকলে কোন সাবজেক্ট পড়িয়েছেন ইত্যাদি। আমার রেসুমীটা ফরমেট এক্সাম্পল হিসাবে দিয়ে দিলাম। এছাড়া টিচিং ফিলোসফি, রিসার্চ ইন্টারেস্ট নিয়ে আলাদা দুটো SOP -র মতো স্টেটমেন্ট, স্টুডেন্ট এভালুয়েশন (SRTE) থাকলে সেগুলো, আর ২-৩ জনের রেকমেন্ডেশন জমা দিতে হয়।  ইন্টারভিউ প্রসেসটা অনেকটা এই রকম: সার্চ কমিটির সাথে Skype বা Zoom ভিডিও কনফারেন্স করে একটা প্রাথমিক ইন্টারভিউ দিতে হয়। সেটা পাস করলে তারপর ক্যাম্পাস ভিসিট-এ যেতে হয়। সেখানে স্টুডেন্ট-ফাকাল্টিদের সামনে সাধারণত একটা টিচিং আর আরেকটা রিসার্চ টক্ দিতে হয়। এরপর ডিন আর ইউনিভার্সিটি চ্যান্সেলরের সাথে একটা মিটিং থাকে।পরে সার্চ কমিটির মেম্বারদের সাথে লাঞ্চ বা ডিনারে গিয়ে দিনব্যাপী ইন্টারভিউ শেষ হয়। এরপর শুধু ডিসিশন জানার অপেক্ষা। অফার পেলে সেটা কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়, স্টার্ট-আপ ফান্ড আর বেতন কিভাবে নিগোশিয়েট করতে হয়  - সেটাও অন্য কোনো এক সময় আলাপ করা যাবে।

সাইড নোট: শুনতে বেশ কঠিন মনে হলেও, আমার কাছে ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে একাডেমিয়ার ইন্টারভিউ অনেক সহজ মনে হয়েছে। স্নায়ুর চাপ অনেক কম হয়েছে। বলে রাখা ভালো, আমি Google, Amazon, Sabre, Bloomburg ইত্যাদি কোম্পনীতে অন-সাইট ইন্টারভিউ দিয়েছি। সে তুলনায়, মাঝারি মানের, আন্ডারগ্রাজুয়েট ইউনিভার্সিটি গুলোতে ইন্টারভিউ দিয়েছি। হয়তো সেইজন্যই সহজ মনে হয়েছে।

ইন্ডাস্ট্রিতে কোন ধরণের কোম্পানিতে জয়েন করা উচিত?
অবশ্যই বড় আকারের কোম্পনি, যাদের ইন্টারন্যাশনাল H1B - এমপ্লয়ী হ্যান্ডেল করার অভিজ্ঞতা আর রেকর্ড আছে, সেগুলোতেই টার্গেট করা উচিত। জয়েন করার আগে অবশ্যই জেনে নিতে হবে, রিক্রুইটারের সাথে সাফ সাফ আলাপ করে নিতে হবে যে ওরা গ্রিনকার্ড প্রসেস করবে কিনা, করলে কতদিনের মধ্যে করবে ইত্যাদি। দরকার হলে বেহায়ার মতো বলতে পারেন যে অফার লেটারে এই ব্যাপারে লিখিত দেয়া সম্ভব কিনা। ছোট কিংবা যারা আগে গ্রিনকার্ড প্রসেস করে নাই - এই ধরণের কোম্পানি খুবই বিপদজনক।  আমি নিজেই ভুক্তভুগি। তাই বার বার বলছি: এই ভুল কেউ করবেন না।  মনে রাখবেন, আপনার অপশনাল প্রাকটিক্যাল ট্রেনিং (OPT) - ১২ মাসের, এরপর শর্ত সাপেক্ষে আরো ১২ মাস এক্সটেন্ড করবে (মোট ২৪ মাস)। এরমধ্যে কোম্পানিকে  আপনার জন্য H1B-র জন্য এপ্লাই করতে হবে।  আর H1B (ওয়ার্ক পার্মিট) সব মিলিয়ে ৬ বছর (প্রথমবার ৩ বছর, আর পরে একবার এক্সটেন্ড করে আরো ৩ বছর = মোট ৬ বছর)। এর মধ্যে আপনার কোম্পানিকে আপনার জন্য গ্রিনকার্ড (নিদেনপক্ষে I-140 form এপ্রুভড) করতে হবে। তা নাহলে আপনাকে আমেরিকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।


বেতন নিয়ে কিভাবে নিগোশিয়েট করবো? 
আমরা বাংলাদেশিরা এই ব্যাপারে একটু সংকোচ বোধ করি। লজ্জায় পড়ে যাই।  মনে রাখবেন, বেতন বা সুযোগ সুবিধা নিয়ে নিগোশিয়েট করাটা এই দেশে খুবই কমন একটা ব্যাপার। এর জন্য আপনার চাকরির অফার কখনোই  'নট' হবে না। এমনভাবে নিগোশিয়েট করবেন যেন আপনি এজেন্ট, আপনার ক্লায়েন্টের জন্য নিগোশিয়েট করছেন।একটা কথা খেয়াল করিয়ে দেই: আপনার গ্রিনকার্ড প্রসেস করার সময় ডিপার্টমেন্ট অফ লেবর (US Department of Labor), আপনার পজিশনের জন্য নূন্যতম বেতন কত হবে সেটা ঠিক করে দেয়। গ্রিনকার্ড হওয়া মাত্র আপনার কোম্পানি আপনাকে সেই বেতন দিতে আইনত বাধ্য। সুতরাং, আপনার বেতন যদি সেটার থেকে অনেক কম হয়, তাহলে কোম্পানি ইচ্ছে করেই আপনার গ্রিনকার্ড করতে চাইবে না, দেরি করবে। আপনাকে পারলে পুরো ৬ বছর সময় H1B -তে, কম বেতনে কাজ করিয়ে নিতে চাইবে। আমার সাথে তাই-ই  হয়েছিল। সুতরাং, চাকরি শুরুর সময়ই এই পজিশনের জন্য বেতন কত হওয়া উচিত সেটা ভালোভাবে জেনে, দরদাম করে জয়েন করবেন। এখন জয়েন করে ফেলি, পরে তো বেতন বাড়বে - এটা ভুল একটা ধারণা। GlassDoor.com এই তথ্য গুলো জানার ভালো একটা ওয়েবসাইট।
[আপডেট: ডিপার্টমেন্টের আরেক জুনিয়র ভাই, রিয়াদের মতে, বেতন যাচাই করার জন্য levels.fyi আর blind.com নাকি GlassDoor.com থেকে ভালো। আমি অবশ্য দুটো ওয়েবসাইটেই ফ্যাকাল্টি পজিশনের বেতন যাচাইয়ের জন্য কোনো অপশন পাই নাই ]


"H1B নাকি লটারি ভিত্তিক?"
ঠিকই শুনেছেন। অনেকটাই ভাগ্যের জোরে পাওয়া যায়।  অনেক অনেক এপ্লিকেশন থেকে লটারি করে বাছাই করা হয়। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক এপ্রুভ করে। তবে একাডেমিয়াতে (পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো, কিংবা ফ্যাকাল্টি পসিশনে) কোনো ক্যাপ নাই।


চাকরির মাধ্যমে গ্রিনকার্ডের সিস্টেম গুলো কি?
মূলত দুইটা। প্রথমটা হলো, কোম্পানি বা ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে সাধারণত EB-1 কিংবা EB-2 ক্যাটেগরিতে প্রসেস করা। এটা হতে ২ - ৪ বছর সময় লাগতে পারে, premium processing ফী বাদ দিলে, পুরাটাই কোম্পানির খরচে হয়। এই লিংকে প্রসেসটা বেশ ভালো করে দেয়া আছে, দেখে নিতে পারেন। আরেকটা প্রসেস হচ্ছে NIW - National Interest Waiver। আমেরিকার জন্য আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, আপনাকে না রাখলে তাদের ক্ষতি হয়ে যাবে - এমনটা দেখিয়ে গ্রিনকার্ড করার একটা ক্যাটেগরি। এটা ল-ইয়ার ধরে নিজেকেই, নিজের খরচে করতে হয়। তবে সুখবর হচ্ছে, একটা চাইনিজ কোম্পনি, চেন ইমিগ্রেশন এন্ড এটর্নিস  - এরা খুবই প্রফেশনাল।এদের মাধ্যমে অনেক বাংলাদেশীর এই ক্যাটেগরিতে গ্রিনকার্ড হয়েছে। এই পদ্ধতিতে ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যেই গ্রিনকার্ড হয়ে যায়। কিছু ভালো রিসার্চ পাবলিকেশন, সাইটেশন সংখ্যা আর রেকমেন্ডেশন লেটার ম্যানেজ করতে পারলে শুনেছি কাজ হয়। আর এরা, ফ্রীতে আপনার কেস এনালাইসিস করে তারপরেই আপনার জন্য এপ্লাই করবে।


"ভাইরে, আমারে দিয়ে হবে না। আমি দেশে চলে যাবো"  
আপনি দেশে চলে যাবেন, ভালো কথা।  কিন্তু পারবেন না দেখে আপনাকে চলে যেতে হবে - সেটা আমি মানছি না। খোঁজ নিয়ে দেখেন, কিছু রেয়ার কেস ছাড়া - পিএইচডি কিংবা মাস্টার্স শেষে কেউই চাকরি ছাড়া থাকেন নাই। একটা না একটা কিছু ম্যানেজ হয়েছেই। কাজেই আপনারও হবে। টেনশনের কারণ নাই। অবশ্য চাকরি না হওয়া পর্যন্ত সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু দেখবেন, হবে।


আজকে এই পর্যন্তই লিখছি।  কারো কোনো প্রশ্ন বা সাজেশন থাকলে কমেন্টে দিলে আলাপ করার চেষ্টা করবো। শেষমেষ আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছি: পুরোটাই আমার একান্ত নিজের মত। ভুল হতেই পারে। ধরিয়ে দিলে খুশি হবো,  গালি দিয়েন না :)

--ইশতিয়াক, ৭ম ব্যাচ

No comments:

Post a Comment

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম

কাজের জায়গায় ভুল থেকে শেখা: regex 'র একটা খুব কমন বিষয় যেটা এতদিন ভুল জানতাম  ৩ ফেব্রুয়ারি, শনিবার, ২০২৪ রেগুলার এক্সপ্রেশন (Regular Exp...